মাওলানা সৈয়দ আবুল কালাম,হবিগঞ্জ, আলোচক এশিয়ান টিভি ও বাংলাদেশ টেলিভিশন ঢাকাঃ তারাবি নামাজ সুন্নত। রোজা মাসে তারাবি নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। রমজান মাসে প্রত্যেকটি নফল ইবাদতের সওয়াব ফরজের সমান দেওয়া হয়। আর একটি ফরজের সওয়াব সত্তরটি ফরজের সমপরিমাণ গণ্য করা হয়। এটি রমজান মাসের অনন্য বৈশিষ্ট্য। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানে একটি নফল আমল করল সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি নফল আদায় করল।’ (মেশকাত : ১৮৬৮)
সুতরাং রমজানে তারাবি নামাজের সওয়াবও এই হিসেবে দেওয়া হবে। তারাবি নামাজ আদায়কারীকে ফরজের সওয়াব প্রদান করা হবে। প্রত্যেক মোমিনকে তারাবি নামাজ আদায়ে সবসময় যতœবান হতে হবে। কল্যাণের মাসে কল্যাণ অর্জনে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে। এটাই হলো রোজাদারের রোজা কবুল হওয়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
তারাবি নামাজের পরিচয় : তারাবি নামাজ রমজান মাসের একটি বিশেষ ইবাদত। এ নামাজ নারী-পুরুষ উভয়ের ওপর সুন্নত। তবে পুরুষের জন্য তারাবির জামাত করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেফায়া। আর নারীরা জামাত ছাড়াই একা একা পড়ে নিবে। রমজান মাসে তারাবি নামাজের মধ্যে একবার কোরআন খতম করা সুন্নত। এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই রাকাত দুই রাকাত করে দশ সালামে বিশ রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। কিন্তু তারাবি নামাজ অবশ্যই এশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের পূর্ববর্তী সময়ের মধ্যে আদায় করতে হবে।
আরবিতে ‘তারাবি’ শব্দের অর্থ আরাম বা বিশ্রাম করা। তারাবি নামাজ পড়াকালে প্রতি চার রাকাত পর কিছু সময় বসে আরাম করার বিধান ইসলামী শরিয়তে রয়েছে। তাই এই নামাজকে তারাবি নামাজ বা সালাতুত তারাবি বলা হয়। প্রতি চার রাকাত পর পর আরাম করার কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, দরুদ শরিফ ইত্যাদি পাঠ করা যেতে পারে। তারাবি নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিলে অবশ্য গোনাহগার হবে। কিন্তু তারাবির কাজা ওয়াজিব হবে না। কারণ, সুন্নতের কাজা নেই। (ফাতাওয়া শামি : ২/৪৫; আহসানুল ফাতাওয়া : ৩/৫২৪)
তারাবি কত রাকাত : রাসুল (সা.) কম-বেশি তারাবি নামাজ আদায়কে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমি এই ইবাদত নিয়মিতভাবে করলে উম্মতের ওপর তা ফরজ হয়ে যাওয়ার
আশঙ্কা রয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, তারাবি মুসলমানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।
অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে তারাবি নামাজ ২০ রাকাত। খোলাফায়ে রাশেদিন ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করেছেন। সাহাবায়ে কেরামের আমল ২০ রাকাতের ওপর। হজরত ওমর (রা.) তাঁর শাসনামলে ২০ রাকাত তারাবি আদায়ের জন্য কঠোর নির্দেশ জারি করে তা বাস্তবায়ন করেছেন। আর রাসুল (সা.) বলেছেন, আমার এবং আমার খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নত দৃঢ়ভাবে ধারণ করা তোমাদের জন্য অপরিহার্য।
সারকথা হলো তারাবি নামাজ হচ্ছে সুন্নত। আর মুসলমানের ঐক্য হচ্ছে ফরজ। তাই তারাবি নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে মুসলিম উম্মাহর মাঝে বিভক্তি বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কারণ, হজরত মহানবী (সা.)-এর সময় থেকে যুগ পরম্পরায় ২০ রাকাত তারাবির আমলই সর্বযুগে সর্বত্র প্রতিপালিত হয়ে এসেছে। বর্তমানেও রমজান মাসে তারাবি নামাজ ২০ রাকাত পড়তে হবে।
নামাজ আদায়ের নিয়ম ও ফজিলত
রমজান মাসের রাতে এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই রাকাত করে ১০ সালামে যে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়, একে তারাবির নামাজ বলা হয়। আরবি ‘তারাবিহ’ শব্দটির মূল ধাতু ‘রাহাতুন’ অর্থ আরাম বা বিশ্রাম করা। ইসলামের পরিভাষায় মাহে রমজানে তারাবির নামাজ পড়াকালীন প্রতি দুই রাকাত অথবা চার রাকাত পর পর বিশ্রাম করার জন্য একটু বসার নামই ‘তারাবি’। মাহে রমজানে রোজাদার সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে যান। তারপর রাতে এশা ও তারাবির নামাজ দীর্ঘ সময় ধরে পড়তে হয়। সেই কারণে দীর্ঘ নামাজের কঠোর পরিশ্রম লাঘব করার জন্য প্রতি দুই রাকাত, বিশেষ করে প্রতি চার রাকাত পর একটু বসে বিশ্রাম করতে হয় এবং দোয়া ও তাসবিহ পাঠ করতে হয়। এ জন্য এই নামাজকে ‘সালাতুত তারাবিহ’ বা তারাবির নামাজ বলা হয়।
রমজান মাসের নির্দিষ্ট নামাজ হ”েছ সালাতুত তারাবিহ। তারাবির নামাজ হলো রোজার গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। রমজান মাসে তারাবির নামাজ জামাতে পড়া ও সম্পূর্ণ কোরআন শরিফ একবার খতম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। তারাবির নামাজ নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা বেশি সওয়াবের কাজ। তবে ঘরেও আদায় করা যেতে পারে। এ নামাজে কোরআন শরিফ খতম করা অধিক সওয়াবের কাজ। তবে সূরা-কিরাআতের মাধ্যমে আদায় করলেও নামাজের সব সওয়াবই পাওয়া যায়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) তারাবির নামাজের জন্য রাতের কোনো বিশেষ সময়কে নির্দিষ্ট করে দেননি। তবে তারাবির নামাজ অবশ্যই এশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের পূর্ববর্তী সময়ের মধ্যে আদায় করতে হবে। নবী করিম (সা.) এ নামাজ বেশির ভাগ সময় রাতের শেষাংশে আদায় করতেন এবং প্রথমাংশে বিশ্রাম নিতেন।