বেআইনিভাবে মুসলিমদের শাস্তি দেওয়ার প্রবণতা বেড়েই চলছে ভারতে। -এইচ আর ডব্লিউ

প্রকাশিত: ৬:৫৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৮, ২০২২
উমার রাযী, আন্তর্জাতিক ডেস্ক-
প্রতিবেশী দেশ ভারতে বেআইনিভাবে প্রধানত মুসলমান সম্প্রদায়কে শাস্তি দেওয়ার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে বলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) গতকাল শুক্রবার এ মন্তব্য করেছে। একাধিক ঘটনার উদাহরণ দিয়ে সংস্থাটি বলেছে, প্রধানত যেসব রাজ্যে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকার ক্ষমতায় রয়েছে, সেখানেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। বেআইনিভাবে নির্মিত মুসলমান সম্প্রদায়ের বাড়ি বা দোকানপাট আদালতে না গিয়ে ভেঙে ফেলা হচ্ছে এবং তারা হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসবে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে, এ অভিযোগে প্রকাশ্যে পেটানো হচ্ছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, কোনো ক্ষেত্রেই আদালতের দ্বারস্থ না হয়ে প্রশাসন সরাসরি আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে এবং প্রকাশ্যে শাস্তি দিচ্ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে মন্তব্য করে সংস্থার দক্ষিণ এশিয়ার মহাপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তারা খোলাখুলি আইন অমান্য করে নিজেরা শাস্তি দিয়ে সাধারণ মানুষকে এই বার্তা দিচ্ছেন যে মুসলমানদের আক্রমণ করার মধ্যে কোনো সমস্যা নেই।
উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, অক্টোবরের ৪ তারিখে; অর্থাৎ গত মঙ্গলবার গুজরাটের খেড়া জেলার একটি ভিডিও চিত্রের কথা। সেখানে দেখা যাচ্ছে, সাদাপোশাকে এক পুলিশ সদস্য বিদ্যুতের পোস্টের সঙ্গে বেঁধে মুসলমান সম্প্রদায়ের কিছু পুরুষকে পেটাচ্ছেন। ওই ব্যক্তির কোমরে রিভলবার গোঁজা রয়েছে। এ ঘটনা ভারতের সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে ও সরকারপন্থী টেলিভিশন চ্যানেলে এ ঘটনার প্রশংসাও করা হয়েছে।
ওই ভিডিও চিত্রে দেখা যাচ্ছে, সাধারণ নারী ও পুরুষের দল ওই জায়গায় একত্র হয়ে পুলিশের এই পেটানোকে চিৎকার করে সমর্থন দিচ্ছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিবৃতিতে বলছে, তাঁরা গুজরাটি গরবা নাচের অনুষ্ঠানে পাথর ছুড়েছিলেন, এ অভিযোগে মোট ১৩ জনকে প্রকাশ্যে পেটানো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনার পর্যাপ্ত সমালোচনা হওয়ার পরেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাটিকে দক্ষিণ এবং পশ্চিম এশিয়ার কিছু দেশে প্রকাশ্যে শিরচ্ছেদ বা বেত মারার ঘটনার সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে তুলনা করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলা হয়েছে, ভারত ধীরে ধীরে ওই দেশগুলোর মতো ‘ব্যর্থ রাষ্ট্র’ হওয়ার পথে পা বাড়াচ্ছে। তবে এ সমালোচনা মূলত ইউরোপীয় ও পশ্চিমা ভাষ্যকারেরা করেছেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের মান্ডসোর জেলায় গত রোববারের একটি ঘটনারও উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানেও গরবা নাচের অনুষ্ঠানে পাথর ছোড়ার অভিযোগে ১৯ মুসলমান পুরুষের বিরুদ্ধে হত্যার চেষ্টা এবং দাঙ্গা করার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করার পর তিনজনের বাড়ি আদালতের অনুমতি ছাড়াই ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
ভারতে কয়েক মাস ধরে মুসলমান সম্প্রদায়ের দোকানপাট এও বাড়িঘর আদালতের কোনো অনুমতি ছাড়াই স্বতঃপ্রণোদিতভাবে প্রশাসন ভেঙে ফেলছে। এ ধরনের ঘটনার ছোট তালিকাও প্রতিবেদনে দেওয়া হয়েছে।
সূত্র- হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচ আর ডব্লিউ)।



error: Content is protected !!