গত ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা ব্যবস্থা না থাকলে ভালো হয়। পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা বাতিল বা কী করা যায় সে বিষয়ে তিনি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে পর্যালোচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ শিশুদের বইয়ের বোঝা কমাতে হবে। তাদের আনন্দ দিতে হবে। তাদের খেলার সুযোগ দিতে হবে। বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব জানিয়েছেন, ঢাকা শহরের প্রাথমিক শিক্ষা আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন করার লক্ষ্যে বৈঠকে ১ হাজার ১৫৯ কোটি ১১ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর ৩৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে দৃষ্টিনন্দন করে সাজানো হবে। পাশাপাশি পূর্বাচলে ১১টি ও উত্তরায় ৩টি মোট ১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নতুনভাবে দৃষ্টিনন্দন করে নির্মাণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষায় উন্নত দেশগুলোর আদলে বাংলাদেশের শিশুদের গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এ প্রেক্ষাপটে ২০১৯ সালের প্রথমদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা না নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। সেই মোতাবেক ২০২০ সালে কিছু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষামূলকভাবে পরীক্ষার পরিবর্তে মূল্যায়ন ব্যবস্থা চালু করা হবে। আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে, ২০২১ সাল থেকে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষার পরিবর্তে নিবিড় মূল্যায়ন ব্যবস্থা চালু করা হবে। অথচ কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিশুদের এ মূল্যায়ন ব্যবস্থা অনুসরণ করা হবে কি না, সে বিষয়টি স্পষ্ট নয়। শিশুদের মধ্যে বৈষম্য থাকলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী হ্রাস পেতে পারে। কারণ আমাদের দেশের জনগণ, বিশেষত শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা ব্যবস্থায় অভ্যস্ত। এককথায়, তারা পরীক্ষাপাগল। আমাদের দেশের শিক্ষক, অভিভাবক ও জনগণের উন্নত বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই। দেশের এ পরীক্ষাব্যবস্থায় লাভবান হয় কোচিং সেন্টারসহ নোট-গাইড ব্যবসায়ীরা। আমাদের পরীক্ষাব্যবস্থা নির্দিষ্ট সিলেবাস, অধ্যায় বা কতিপয় প্রশ্নের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এ ব্যবস্থা অনেকটা হাতুড়ে ডাক্তারের চিকিৎসার মতো।
আমাদের পরীক্ষাব্যবস্থাকে সার্বিক জ্ঞান যাচাই করে জ্ঞাননির্ভর করতে হবে। বর্তমান পরীক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েও উত্তীর্ণ হতে পারে না। শিক্ষক শিক্ষার্থীকে সব ধরনের শিক্ষা দেবেন এবং মূল্যায়ন করবেন। ঘাটতি থাকলে তা পূরণের ব্যবস্থা করবেন। আগামী প্রজন্মের শিশুদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আদর্শ মূল্যায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার্থীকে জ্ঞান শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা, নিয়মশৃঙ্খলা, সুঅভ্যাস গঠন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, গরিব শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা, এককথায় পরিপূর্ণ সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার শিক্ষা দিতে হবে। এ জন্য শিক্ষকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় এনে তাদের পাঠদানবহির্ভূত কাজ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে। কর্মকর্তাসহ ম্যানেজিং কমিটির অহেতুক খবরদারি বন্ধ করতে হবে। শিক্ষকের মর্যাদা থাকবে সবার উপরে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিশুদের বইয়ের বোঝা কমানোর কথা প্রায়ই বলে থাকেন। এ নির্দেশনা কার্যকর করার দায়িত্ব প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। বইয়ের বোঝা কমানোর বিষয়ে তাদের কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ এখনও দৃশ্যমান নয়। শিশুদের বিকালে খেলাধুলার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের বিকাল ৩টার পর সময়সূচি থাকা মোটেই কাম্য নয়।