উমার রাযী, আন্তর্জাতিক ডেস্ক।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট এক্সগোটাবায়া রাজাপাকসার জোট সরকারের ৪০ জনের বেশি এমপি জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর অবশেষে ক্ষমতাসীন জোট তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসার শ্রীলঙ্কান পডুজানা পেরামুনা পার্টির নেতৃত্বাধীন জোটে ছিল এমন কিছু দলের এমপিরা বলেছেন, তারা এখন পার্লামেন্টে স্বতন্ত্র অবস্থান নেবেন।
এর ফলে প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসার সরকারের পক্ষে এখন কাজ চালানো কঠিন হয়ে পড়তে পারে। যদিও স্বতন্ত্র এমপিরা চাইলে সরকারকে সমর্থন দিতে পারে।
এদিকে নতুন অর্থমন্ত্রী আলি সাবরি ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে তার পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি এখন বিদ্যুৎ ঘাটতি এবং জ্বালানি সংকটে খাবুডুবু খাচ্ছে। অর্থনীতির বেহাল দশা এবং বৈদেশিক মূদ্রার সঞ্চয় কমে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কা এই সংকটে পড়েছে।
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসার পদত্যাগ দাবি করে প্রতিদিনই গণবিক্ষোভ হচ্ছে।
এটা স্পষ্ট নয়, ৪০ জনের বেশি এমপির জোট ত্যাগের ফলে অবস্থা এখন কী দাঁড়াবে। তারা সরকারের জোট ছাড়লেও বিরোধী দলের প্রতি সমর্থন এখনো জানাননি। তবে এর ফলে পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্ব প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।
রাজাপাকসার মন্ত্রিপরিষদ এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছে। তবে প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসা, এবং তার ভাই প্রধানমন্ত্রী মহিন্দা রাজাপাকসা এখনো পর্যন্ত পদত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন।
এর পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট সব বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন একটি জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠনের জন্য, যেখানে মন্ত্রিসভায় বিরোধী দলও অংশ নিতে পারে। তবে সব বিরোধী দলই এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে এবং প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসার পদত্যাগ দাবি করছে।
‘জনগণ যেটা চায়, তা হলো, প্রেসিডেন্ট এবং তার পুরো সরকারের পদত্যাগ’ বলছেন শ্রীলঙ্কার প্রধান বিরোধী জোট সামাগি জানা বালাওয়েগায়া দলের নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা।
এর আগে মঙ্গলবার সদ্য নিযুক্ত একজন অর্থমন্ত্রীও ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি পদত্যাগ করছেন। অর্থমন্ত্রী হতে রাজী হওয়ার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে তিনি সরে দাঁড়ানোর কথা জানালেন।
প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসার একজন ঘনিষ্ঠ মিত্র আলি সাবরি বলেন, তিনি তার পদটি রাজনীতির বাইরে থেকে আসা কারও জন্য ছেড়ে দেবেন যিনি হয়তো’ পরিস্থিতি সামলানোর মতো যোগ্যতা রাখেন।’
এদিকে দেশজুড়ে প্রধান শহরগুলোতে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
গত কদিনে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবি আরো জোরালো হয়ে উঠেছে।
বিক্ষোভকারীরা এমনকি কারফিউ অমান্য করেছে। বিক্ষোভ দমনের জন্য শুক্রবার হতে রোববার পর্যন্ত এই কারফিউ জারি করা হয়েছিল। এর আগে গত বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্টের বাসভবনের বাইরে পর্যন্ত সহিংস বিক্ষোভ হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসার জনপ্রিয়তায় কত বড় ধস নেমেছে এই বিক্ষোভকে তার প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে। তিনি দেশে স্থিতিশীলতা এবং ‘দৃঢ় হাতে’ দেশ শাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
বৈদেশিক মূদ্রার অভাবে শ্রীলঙ্কা এখন তার জ্বালানি এবং অন্যান্য পণ্য আমদানি করতে পারছে না। ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর এটিকে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকট বলে মনে করা হচ্ছে।
জ্বালানি আমদানির খরচ মেটানোর জন্য শ্রীলঙ্কার যে বৈদেশিক মূদ্রা দরকার, সেটি তাদের নেই।
‘নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঘাটতি চলছে তো চলছেই, বিশেষ করে জ্বালানি তেল এবং রান্নার গ্যাস। হাসপাতালগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম, কারণ সেখানে কোন ওষুধ নেই’, বলছেন শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। তিনি শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টির নেতা, যে দলটি প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসার জোট থেকে বেরিয়ে গেছে।
মিস্টার সিরিসেনা বলেন, ‘এ রকম এক সংকটের সময় আমাদের দল জনগণের পক্ষেই থাকতে চায়।’