সিপিবি সমাবেশে হামলার রায়: সব সন্ত্রাসী হামলার দ্রুত বিচার কাম্য
রাজধানীর পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে বোমা হামলা মামলার রায়ে ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও দু’জনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে মামলার জীবিত ১২ আসামির মধ্যে দু’জনকে খালাস দেয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি আসামিদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। প্রায় দুই দশক আগে ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি এ বোমা হামলায় পাঁচজন নিহত এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন।
হামলার ১৯তম বার্ষিকীতে এ রায় ঘোষিত হল। উল্লেখ্য, ১৯ বছর আগে এ হামলার ঘটনার পর মামলা হলেও এতে অভিযুক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে নির্ভরযোগ্য তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে ২০০৩ সালে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
তৎকালীন সরকার এই হামলাকে সিপিবির অভ্যন্তরীণ কোন্দল বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তী সময়ে দেশে বিভিন্ন হামলার ঘটনায় জঙ্গিরা জড়িত এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৫ সালে সিপিবি সমাবেশে বোমা হামলা মামলাটির পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। মামলাটি পুনঃতদন্তের পর ২০১৪ সালে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
রায় ঘোষণায় এত দীর্ঘ সময় কাক্সিক্ষত না হলেও সিপিবি সমাবেশে হামলা মামলার এ রায়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবার কিছুটা হলেও সান্ত্বনা খুঁজতে পারেন। দেরিতে হলেও রায় ঘোষিত হয়েছে, এটি অবশ্যই স্বস্তিদায়ক। জানা যায়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১০ জনের মধ্যে চারজন ছাড়া বাকিরা পলাতক রয়েছে।
তাদের গ্রেফতারে তৎপর হওয়া জরুরি। জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের শীর্ষনেতা মুফতি আবদুল হান্নানও এ মামলায় অভিযুক্ত আসামি। তবে অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এ মামলার অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
সিপিবির সমাবেশে হামলা দেশে বহুল আলোচিত বোমা হামলাগুলোর একটি। বস্তুত ১৯৯৯ সালে সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচীর সমাবেশে হামলার মধ্য দিয়ে দেশে এ ধরনের বোমা হামলার সূচনা হয়। এরপর পল্টনে সিপিবির সমাবেশে এবং রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালানো হয়।
এরপর ধারাবাহিকভাবে দেশে একের পর এক বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। শেখ হাসিনার ওপর ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, ময়মনসিংহে সিনেমা হলে বোমা হামলা, দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা এবং হবিগঞ্জে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ওপর বোমা হামলাসহ আওয়ামী লীগের আরও কয়েকটি সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এসব হামলা একই সূত্রে গাঁথা এবং প্রতিটি ঘটনারই দ্রুত বিচার হওয়া উচিত।
সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলা মামলার রায় সন্ত্রাসীদের জন্য একটি কঠোর বার্তা সন্দেহ নেই। তবে আশঙ্কার বিষয় হল, বিলম্বিত বিচারের কারণে মামলার অনেক আসামি ফেরারি হয়েছে। কারও কারও মৃত্যুও হয়েছে। যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের আর বিচারের সম্মুখীন করার সুযোগ নেই।
বস্তুত বিলম্বিত বিচার এবং আইনের ফাঁক গলে অনেক অপরাধীই ফেরারি হয়ে যায়। তাদের অধিকাংশই পুনরায় অপরাধ তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ে। তাই এ ধরনের ঘটনার দ্রুত বিচার হওয়া উচিত। দীর্ঘদিন বিচারের অপেক্ষায় থাকা অন্যান্য মামলার রায় দ্রুত ঘোষিত হবে, এটাই কাম্য।